Life History Of Shree Shree Harichand Thakur

যুগাবতার শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর
মতুয়া ধর্মের প্রবর্তক :- মতুয়া
ধর্মের প্রবর্তক হলেন যুগাবতার শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর । তিনি বাংলা ১২১৮
সালের ২৯ শে ফাল্গুন , ১৮১২ ইংরেজী সালের ১১ই মাচ’ বুধবার মধুকৃষ্ণা
ত্রয়োদশী তিথিতে ব্রহ্মমুহূর্তে এই পৃথিবীতে অবর্তীন হন । এই সময়টা ছিল
বারূনী স্নানের পূন্য লগ্ন । তিনি ১২৮৪ সালের ২৩শে ফাল্গুন , ইংরেজী ১৮৭৮
সালের ৫ই মাচ’ বুধবার একই তিথিতে মানবলীলা সংবরন করেন । একই তিথি , বারে ও
লগ্নে জন্ম ও মৃত্যুর ঘটনা বিরল ।
বংশ পরিচয় :-
শ্রীশ্রী
হরিচাঁদ ঠাকুরের পিতার নাম ছিল যশোবন্ত ঠাকুর এবং মাতার নাম অন্নপূর্না
দেবী । উভয়েই ছিলেন পরম বৈষ্ণব । যশোবন্ত ঠাকুরের পাঁচ পুত্র । ঠাকুর
হরিচাঁদ ছিলেন দ্বিতীয় । অন্যান্যরা হলেন কৃষ্ণদাস , বৈষ্ণবদাস , গৌরীদাস
এবং স্বরূপদাস । ঠাকুর হরিচাঁদের পূব্ব্ পুরুষ রামদাস ঠাকুর ছিলেন মৈথিলী
ব্রাহ্মন ও পরম বৈষ্ণব । তিনি তীর্থ পরযটন করতে করতে বাংলাদেশে আসেন । তার
অধঃস্তন পুরুষ সবাই ছিলেন ঈশ্বর পরায়ন । এই পবিত্র বংশেই অবতার রূপে
শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর জন্ম গ্রহন করেন ।
আবির্ভাবের পটভূমি :-
স্রষ্ঠার
সৃষ্ঠির সব কিছুই একটি সু-শৃঙ্খল নিয়মাধীনে চলছে । কোথাও বিশৃঙ্খলা
দেখাদিলে প্রাকৃতিক শক্তি সেখানে শৃঙ্খলা বা সাম্য প্রতিষ্ঠা করেন । এই
সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য মাঝে মাঝে এই ধরার বুকে অবতাররূপে ভগবনের আবির্ভাব
ঘটে । আর এই কারেনই শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের শুভাগমন হয়েছিল । ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে পৃথিবীতে কি রাষ্ট্রীয় জীবন , কি সমাজ জীবন সকল ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছিল । কিছু সংখ্যক সুযোগ সন্ধানী মানুষ সাধারন মানুষের সততা ও সরল বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে ধর্মের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করে ।ধম্ম হয় শোষনের হাতিয়ার ।ধর্মের বিকৃতি ঘটিয়ে ধম্মকে সীমিত গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখে । ধর্মের আবরনে এক শ্রেনীর ভন্ডের দল অনাচার ও ব্যাভিচারে লিপ্ত হয় । ধর্মে দেখা দেয় গ্লানি । মানুষ ধম্মহীন হয়ে এক প্রানহীন সত্বায় পরিনত হয় ।ত্রয়োদশ থেকে অষ্টাদশ শতাব্দী পরযন্ত ব্রাহ্মন্যবাদের আধিপত্য বিস্তার লাভ করে । এর ফলে সাধারন মানুষ তাদের দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয় । ধীরে ধীরে সৃষ্ঠি হয় অমানবিক জাতিভেদ প্রথা । সাধারন মানুষদেরকে তাদের ধম্মীয় অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয় । তাদের মন্দিরে প্রবেশের অধিকারটুকুও কেড়ে নেওয়া হয় । এমনকি হিন্দু ধম্মের প্রধান ধম্মগ্রন্হ বেদ পাঠ , এমনকি শ্রবন নিষিদ্ধ করাহয় ।
এ সময় তৎকালীন রাষ্ট্র-নায়কদের ছত্রছায়ায় ব্রাহ্মন্যবাদীরা এদেশের আদি অধিবাসীদের উপর অকথ্য অত্যাচার শুরু করে । ফলাফল স্বরূপ অনেকেই দলেদলে ধম্মান্তরীত হতে শুরু করে । অনেকেরই ধন-সমপত্তি কেড়ে নেওয়া হয় । সমাজ ব্যবস্হায় চরম ভেদ-বৈষম্য হওয়ায় একদল মানুষকে হীন পতিত ও অবহেলিত করে রাখা হয় । ছুৎমার্গের বিষবাষ্পে সমাজ জীবনে নেমে আসে অশান্তির কালো ছায়া । এই ছুৎমার্গীদের নিশ্পেষনে অতিষ্ট হয়ে দলে দলে অবহেলিত , নির্যাতিত লোক ধম্মান্তরীত হতে থাকে । এসময় সমাজ জীবনে গুরুবাদ ও গুরুমন্ত্রের খুব প্রভাব বিস্তার করে । প্রেমহীন গুরুর দেওয়া প্রানহীন মন্ত্রসাধনাই চুড়ান্ত ধম্মীয়-সাধনা বলে বিশ্বাস করতে জনসাধারন অভ্যস্হ হয়ে পড়ে । ফলে নিষ্ঠা-প্রেম-পবিত্রতা প্রভৃতি সদগূনের অনুশীলন অবশ্য করনীয় বলে বিবেচিত হতোনা । সমাজের এই অসহায় মানুষদের এই চরম অন্ধকরাছন্ন দিনে , মনুষ্যত্বের চরম লাঞ্চনায় মানবাত্মা নিঃস্ব-নিপীড়িত , অত্যাচারিত মানুষের মুক্তির পথ দেখাতে এবং ধম্মকে রক্ষার জন্য পূনব্রহ্ম অবতারের আবির্ভাবের প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল । সমাজের অবহেলিত এই জনগোষ্ঠী যাদের মানুষ বলে গন্য করা হয়নি , যাদের চন্ডাল বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছিল , তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কেউ এগিয়ে আসেনি । ব্রাহ্মন্যবাদী বৈষ্ণবধর্মের কাছে যারা ছিল পশুবৎ , সেই অশ্পৃশ্য-চন্ডাল জাতির উদ্ধারের জন্য পরম প্রেমময় , পরম দয়াল , অকুল পাথারের কান্ডারী যুগাবতার শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর । কবি রসোরাজ তারক চন্দ্র সরকার লিখিত শ্রীশ্রী হরিলীলামৃত গ্রন্হে হরি অবতারের সুন্দর বর্ননা দেয়া আছে --
জীবোদ্ধার , প্রেমদান , প্রতিজ্ঞা পালন
অন্নপূর্না , শচীবাঞ্ছা করিতে পুরন ।।
বৈষ্ণবের কুটিনাটী খন্ডের কারন
জীব উদ্ধারের জন্য হইলো মনন ।।
সে কারনে অবতার হৈল প্রয়োজন
সফলা নগরী যশোবন্তের নন্দন ।।
উপরোক্ত
কথাগুলির মধ্যে শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের অবতার হওয়ার যোগসুত্র রয়েছে ।
চৈতন্য ভাগবতের মধ্যম খন্ডের ২৬শ অধ্যায়ে দেখাযায় গৌরাঙ্গ মহাপ্রভূ তাঁর
মাকে বলেছেন--
আরো দুই জন্ম এই সংকীত্তনারম্ভে
হইব তোমার পুত্র আমি অবিলম্বে ।।
এই মত তুমি মোর মাতা জন্মে জন্মে
তোমার আমার কভু ত্যাগ নাহি মরমে ।।
শ্রীজীব গোস্বামী কৃত চৈতন্য চরিত গ্রন্হে মহাপ্রভু তাঁর মাকে বলেছেন --
তোমাকে এড়াতে শক্তি নাহিক আমার
তব গর্ভে জন্মনিব আরো দুই বার ।।
শেষ জন্ম নিব মাগো ঐশান্য কোনে
হরি নামে মাতাইব সব জীবগনে ।।
উক্ত
গ্রন্হদ্বয়ের কথানুসারে মহাপ্রভূর দুই জন্মের এক জন্ম খেতরে শ্রীনীবাস
রূপে । তাহলে দ্বিতীয় জন্ম কোথায় ? গৌরাঙ্গ মহাপ্রভূর জন্ম নদীয়ায় হলেও
লীলা সাঙ্গ করেন ওড়িষ্যা পূরীতে । সেখান থেকে ওড়াকান্দি ঈশান কোনে অবস্থিত ।
তাই বলা যায় তিনি পুনরায় ওড়াকান্দিতে হরিচাঁদ রূপে এসে কলির জীবদেরকে
হরিনাম দান করে সেই প্রতিজ্ঞা পুরন করেছেন । শ্রীচৈতন্য ভাগবতের মধ্যম খণ্ডের ২৬ অধ্যায়ে দেখা যায় , গৌরাঙ্গের সন্ন্যাস গ্রহনের ইচ্ছা শুনে তাঁর ভক্তগন তাঁর বিরহে ব্যাকুল হলে তিনি তাদের প্রবোধ দেন এই বলে --
সকল কালে তোমরা সকলি মোর সঙ্গ
এই জন্ম হেন না জানিবা জন্ম জন্ম ।।
এইমত আরো আছে দুই অবতার
কীত্তন আনন্দরুপ হইবে আমার ।।
তাছারা
শ্রীশ্রী হরিলীলামৃত গ্রন্হে কবিরসরাজ তারক চন্দ্র সরকার আরো একটি প্রমান
দিয়েছেন । মহাপ্রভু যখন দারূব্রহ্মের সঙ্গে মিশে গিয়ে লীলা সাঙ্গ করেন তখন
ভক্তগন কাতর হয়ে উক্ত বিগ্রহের উপর চড়াও হন ।তখন শূন্যবানী হয়--
মানুষে আসিয়া , মানুষে মিশিয়া
করিব মানুষ লীলে ।
সেইত সময় , পাইবে আমায়
পুনশ্চ মানুষ হলে ।।
উপরোক্ত
প্রমান সাপেক্ষে আমরা বলতে পারি অন্যান্য সব অবতারের শেষ অবতার এবং
গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুই যে শ্রীশ্রী হরিচাঁদ রূপে শ্রীধাম ওড়কান্দি এসে জন্ম
গ্রহন করছেন তাতে কোন সন্দেহ নেই ।
শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর পূর্নাবতার :-
শ্রীশ্রী হরিলীলমৃত গ্রন্হে কবি রসরাজ তারক চন্দ্র সরকার লিখেছেন --
রাম হরি কৃষ্ণ হরি শ্রী গৌরাঙ্গ হরি ,
হরিচাদ আসল হরি পূর্নানন্দ হরি ।।
যুগে
যুগে আবিরভুত সব অবতার মাত্রই শক্তির প্রতীক ।প্রত্যেকেই অসীম শক্তির আধার
। তাদের সাথে সাধারন মানুষের যথেষ্ঠ পার্থক্য , কোন তুলনাই চলেনা । তাদের
কৃত কম্মও অসাধারন , অলৌকীক, অতুলনীয় । সব্বগুনযুক্ত সকল শক্তির আধার
স্বরূপ ভগবান অবতাররূপে তথা মানুষরূপে ধরাধামে আসেন । সাধারন মানষের সঙ্গে
তাদের পার্থক্য , তাঁরা অন্তর্যামী , দুরদ্রষ্টা , ভবিষ্যত বক্তা । অবতারের
শক্তি অপ্রতিহত ভাবে লোকচক্ষুর অন্তরালে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং সকলেই
তাঁর দ্বারা প্রভাবিত হয় । এসব গুন সাধারন মানুষের মধ্যে দেখাযায় না ।
আমাদের ধম্মীয় শাস্ত্র গ্রন্হাদিতে প্রমানিত হয় পুর্বেরকার কোন অবতারই
পূর্নাবতার নন । ভগবান রাম , কৃষ্ণ প্রভৃতি অবতারের কৃত কম্মও পক্ষপাত
মুক্ত নয় । তাছাড়া এই অবতারগন সকলেই কোন না কোন গুরুর কাছে দীক্ষা নিয়েছেন ,
সাধনা করেছেন , দেব দেবীর পূজা করে তাকে সন্তুষ্ট করে আপন অভীষ্ট পুরন
করেছেন । বিনা সাধনায় তারা কিছুই করতে পারেননি । কিন্তু হরিচাঁদ ঠাকুরের
লীলা সবকিছুই অন্যান্য অবতার থেকে স্বতন্ত্র্য । তাকে কারো কাছ থেকে দীক্ষা
নিতে হয়নি , সাধন-ভজন করতে হয়নি , মন্ত্র-তন্ত্রও জপ করতে হয়নি । তার
জীবনে যা কিছু ঘঠেছে সব কিছুই বৈচিত্রময় , অলৌকীক । ঠাকুরের নিজ মুখের
বানী--
অংশ অবতার যত পূব্বেতে আইলো,
আমি পূন জানি তারা সকলি জুটিল ।।
রাম,কৃষ্ণ,বৌদ্ধ আদি অথবা গৌরাঙ্গ ,
আমাকে সাধনা করে পেতে মম সঙ্গ ।।
পূ্ন আমি সব্বময় অপুর্নের পিতা ,
সাধনা আমার কন্যা আমি জন্মদাতা ।।
আমি হরিচাঁদ এবে পূর্নের অবতার ,
অজর অমর আমি ক্ষীরোদ ঈশ্বর ।।
উপরোক্ত
বানীর তাতপর্য বিশ্লেষন করলে ষ্পষট প্রতিয়মান হয় যে , হরিচাঁদ ঠাকুর ছাড়া এ
পর্যন্ত যে সমস্ত অবতার হয়েছেন তারা সবাই ঈশ্বরের অংশ মাত্র , কেউই
পুর্নাবতার নন । গুরুচাঁদ চরিতে' বলা হয়েছে --
যারা অবতার হলো সকলি অপুর্ন ,
পুনর্শক্তি বিনা কভু কলি নহে জীর্ন ।।
এজন্যই পুর্নব্রহ্ম হরিচাঁদ পুর্ন শক্তি নিয়ে ধরায় অবতীর্ন হয়েছিলেন । তিনি ধরায় এলে অন্যান্য যুগের ভক্তগন এসে জন্মগ্রহন করেন--
স্বয়ং এর অবতার হয় যেই কালে,
আর আর অবতার তাতে এসে মিলে ।। শ্রীশ্রীহরিলীলামৃত ।
এর
প্রমান মিলে শ্রীশ্রীহরিলীলামৃতে বর্নীত বিভিন্ন উপাখ্যানগুলিতে । হীরমনের
রাম-রূপ দর্শন, ঠাকুর হরিচাঁদের সহিত গোস্বামী লোচনের মিলন, গোস্বামী
গোলকচাঁদের চতুর্ভূজ রুপ দর্শন, মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাসের উপাখ্যান,
শ্রীহরিচাঁদ ঠাকুরের পদে রামচাদের পদ্ম দর্শন, কলমদাস বৈরাগীকে কৃষ্ণ রুপ
দেখানো ইত্যাদি আরো অসংখ্য ঘটনা ঠাকুরের পুর্নতার বহিঃপ্রকাশ । শ্রীশ্রী
ঠাকুরের বাল্য ও কৈশোরের উপাখ্যান গুলি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ।
শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের ঐশী শক্তির প্রকাশ :-
শ্রীশ্রী
হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্ম বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী থানাধীন
ওড়াকান্দি গ্রামে । তার জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সময়টা বিস্ময়কর ও অলৌকিক
কর্মকান্ডে বৈচিত্রময় । ভুমিষ্ঠ হওয়া মাত্রই তিনি তিন বার --আমি হরি,আমি
হরি, আমি হরি-- বলে নিজের পরিচয় দান করেছিলেন । তার মুখের এই অনন্য-অসাধারন
বানী শুনেও সাধারন মানুষ তাকে চিনতে পারেনি । কৈশোরে তাঁর বাল্যসখা
বিশ্বনাথ কলেরায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে তার প্রান দান করে ঠাকুর হরিচাঁদ
বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তিনিই নিদানের কর্তা হরি । এই ঘটনার পরপরই ঠাকুর হরিচাঁদ
আরো এক অলৌকিক লীলা প্রকাশ করলেন । সফলাডাঙ্গায় অবস্হিত এক -বার-এর শক্তিকে
আকর্ষন করলে -বার- শক্তিহীন হয়ে পড়ে । শ্রীশ্রীহরীলীলামৃতে আছে--
--ঠাকুরের জ্যোতি হরিচাঁদেতে মিশিল,
ব্রজনাথে লয়ে হরি নিজালয়ে গেল ।।
যে মানুষ মম দেহে আবির্ভুত ছিল ,
ঐ যে সে মানুষ মানুষে মিশে গেল ।।
এই
সব দেখে সাধারন মানুষ বুঝলো, যশোবন্ত নন্দণ হরি ব্রহ্মপরাতপর । ঠাকুর
হরিচাঁদ তাঁর বল্য সখাদের নিয়ে মাঠে গরু চড়াতেন । গরু রাখতে গিয়ে তিনি
রাখালিয়া খেলার ছলে ব্রজলীলারভাব ও কার্যকলাপ করিতেন । বিষধর সাপ ধরে
খেলানো, আবা ধ্বনি দিয়ে গরুদের ডাকা মাত্র ছুটে আসা, দাদা কৃষ্ণদাসের মৃত
গরুর জীবন দান প্রভৃতি লীলা দেখে সাধারন মানুষ বলতো, হরিচাঁদ অলৌকিক ও ঐশী
শক্তির অধিকারী । পরবর্তীকালেও তিনি অনেক অলৌকিক লীলা করেছেন । হীরমনের
রাম-রূপ দর্শন, ঠাকুর হরিচাঁদের সহিত গোস্বামী লোচনের মিলন, গোস্বামী
গোলকচাঁদের চতুর্ভূজ রুপ দর্শন, মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাসের উপাখ্যান,
শ্রীহরিচাঁদ ঠাকুরের পদে রামচাদের পদ্ম দর্শন, কলমদাস বৈরাগীকে কৃষ্ণ রুপ
দেখানো ইত্যাদি আরো অসংখ্য ঘটনা ঠাকুরের পুর্নতার বহিঃপ্রকাশ । এছাড়াও তার
মুখের কথায় কত অপুত্রক পুত্র পেল, কত মরা বাঁচল, কত অন্ধ ফিরে পেল তার
দৃষ্টি শক্তি, কত রোগী রোগ মুক্ত হলো তার হিসেব মেলা ভার । এসব অসম্ভব ঘঠনা
প্রতক্ষ্য করে মানুষের বিশ্বাস ক্রমেই বাড়তে লাগলো, দলে দলে মানুষ তাঁর
কাছে ছুটে আসতে লাগলো । শ্রীশ্রী হরিলীলামৃত গ্রন্হে ঠাকুরের অলৌকিক লীলা
সামান্যমাত্র বর্নীত হয়েছে । বহু ঘটনা আজো মানুষের অজানা ও অপ্রকাশিত রয়ে
গেছে । ঠাকুর হরিচাঁদ আত্মপ্রচার পছন্দ করতেন না । তাঁর ঘটনাবহুল জীবনী
কিছু লেখা সত্বেও ঠাকুরের অনিচ্ছার কারনে দৈবযোগে হারিয়ে যায় । এই ঘটনা
শ্রীশ্রীহরীলীলামৃত গ্রন্হে -গ্রন্হ রচনার ইতিবৃত্ত- নামক আখ্যানে বর্নীত
আছে । কিছু ঘটনা লেখার পর যখন ঠাকুরকে পড়ে শোনানো হয় তখন ঠাকুর বলেন--
ক্ষান্ত কর লেখলেখি বাহ্য সমাচার,
অন্তরের মাঝে রাখ আসন আমার ।।
হেন কালে দৈবযোগে লীলাগ্রন্হ খানি,
আপনি হরিয়া লন দেবী বীনাপানি ।।
পরবর্তিকালে ঠাকুরের কৃপাদেশে কবি রসরাজ তারক চন্দ্র সরকার শ্রীশ্রীহরীলীলামৃত গ্রন্হ রচনা করেন ।
No comments:
Post a Comment